তোমরা যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ে নতুন, তারা একটি বিষয়ে খুব গুরুত্ব সহকারে মাথায় রাখবে, ফ্রিল্যান্সিং এমন কোন বিষয় নয়, যে তুমি শিখলেই ইনকাম করতে পারবে, তুমি প্রশিক্ষণ নিয়ে কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে অনেক কিছুই করতে পারবে, কিন্তু সত্যিকার ফ্রিলান্সিং তখনি সম্ভব যখন তোমার মাঝে কিছু ক্রিয়েটিভিটি থাকবে, তোমার মেধার ব্যবহার করবে, তোমার সৃজনশীলতা থাকবে। ফ্রিল্যান্সিং খুব সহজ, ঠিক তেমনি খুব কঠিন। কারণটি হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং যদি শিখেই সম্ভব হতো তাহলে ভাবো তো- তুমি যে উপজেলায় বসবাস করছো সেই উপজেলায় ন্যূনতম দশটি ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং সেন্টার আছে, আর এই প্রতিটি ট্রেনিং সেন্টারে ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং দেওয়া হয় এবং এই বিষয়ে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়, সেখানে ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং নিলেই তুমি ফ্রিল্যান্সার হয়ে যাবে, তুমি ইনকাম করতে পারবে, কিন্তু আসলে বাস্তবতা কতটুকু? ট্রেনিং সেন্টার গুলোতে যে ট্রেনিং দেওয়া হয় বা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সেগুলো ম্যাক্সিমাম ছয় মাসের অর্থাৎ ছয় মাস পরেই তুমি কিছু না কিছু ইনকাম করতে পারবে। এবার হিসাব করো প্রতি ছয় মাস অন্তর প্রতিটি ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং সেন্টার থেকে ১০ জন করে বের হলে দশটি প্রতিষ্ঠানে বের হচ্ছে ১০০ জন অর্থাৎ বছরে ২০০ জন এবার ধরো এই ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং সেন্টার গুলো ন্যূনতম পাঁচ বছর যাবত ট্রেনিং দিয়ে আসছে, তাহলে পাঁচ বছরে ন্যূনতম তোমার উপজেলায় এক হাজার জন ফ্রিল্যান্সার হওয়ার কথা। এবার ভেবে বল তুমি তোমার উপজেলায় কতজন ফ্রিল্যান্সার দেখেছো, কয়জনার নাম জানো, কতজন ফ্রিল্যান্সার ফ্রিল্যান্স করে স্বাবলম্বী হয়েছে। তাহলে কি তোমার উপজেলায় চাকুরীর জন্য কেউ দৌড়ঝাপ করতো? তোমার উপজেলা থেকে চাকরি দেওয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যেত না, কারণ সবাই ফ্রিল্যান্সার হয়ে যেত, কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য তারা কেউই ফ্রিল্যান্সার হয়নি, আর যারা হয়েছে হাতেগোনা দুই একজন, যাদের আসলেই মেধা আছে, ক্রিয়েটিভিটি আছে, সৃজনশীলতা আছে। তুমি যদি সত্যিকার অর্থে ফ্রিল্যান্সার হতে চাও কিছু বিষয়ে মাথায় রাখবে, কখনোই অন্যকে ফলো করার চেষ্টা করবে না, সর্বপ্রথম তোমার চিন্তা হবে- তুমি আসলে কোন জিনিসটা ভালো পারো, কোন জিনিসটা করার জন্য তোমার ভেতর থেকে আগ্রহ জন্মায়, তুমি সেই জিনিসটার উপর প্রশিক্ষণ নাও, সেটাকেই আরো ধারালো করো, তাহলেই তুমি কিছু করতে পারবে, আর যদি তোমার হাতে কম্পিউটার থাকে, ল্যাপটপ থাকে, তাহলে সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে তোমার টাইপিং এর গতি বাড়াও, ফ্রিল্যান্সার হতে গেলে সর্বপ্রথম কম্পিউটারের দক্ষ হতে হবে, তুমি যে কাজেই যাও না কেন টাইপ তোমার লাগবেই, সুতরাং টাইপের কোন বিকল্প নেই, যদিও বর্তমানে ভয়েস কমান্ড দিয়ে টাইপের কাজ করা যায়, তবে তুমি সব স্থানে, সকল সময় ভয়েস কমান্ড ব্যবহার করতে পারবেনা, সুতরাং প্রথমে তোমাকে টাইপ ভালোভাবে শিখতে হবে, এবং খুবই ভালো ভাবে শিখতে হবে, এরপরে তোমাকে শিখতে হবে সেই কাজটি যে কাজটি তোমার ভিতর থেকে আসে, যে কাজটি তুমি করতে চাও, যে কাজটিই তুমি ছোটবেলা থেকেই করার স্বপ্ন দেখো। সেই কাজ কখনোই শিখতে যাবে না যে সম্পর্কে তোমার কোন ধারনাই নেই। অন্যরা কি করলো, কি করছে, তা তোমার দেখার দরকার নেই। কিভাবে তুমি তোমার কাজের উপর ফ্রিল্যান্স করে আয় করতে পারবে, তোমার কাজের উপর ফ্রিল্যান্সার হতে পারবে, সে বিষয়টি জানতে কোন ভালো ফ্রিল্যান্সিং কনসালটেন্ট এর শরণাপন্ন হতে পারো, সে তোমাকে পথ দেখাবে। আর যদি অন্যের দেখাদেখি ফ্রিল্যান্সিং করতে যাও তাহলে ৬ মাস কোন ফ্রিল্যান্স কম্পিউটার সেন্টারে ফ্রিল্যান্সিং শিখে, এক বছর বাড়িতে বসে কম্পিউটার টিপাটিপি করে, বিভিন্ন গেমিং সাইট গুলো গুতাগুতি করে, ঝরে পড়া পাতার মতো ফ্রিল্যান্স জগৎ থেকে তুমি ছিটকে পড়ে যাবে। একটি সময় তোমার মনে হবে- দূর এগুলো আমাকে দিয়ে হবে না, আমাকে দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং হবে না, তখন মনে হবে সবকিছুই ভাওতাবাজি। কিন্তু বিশ্বাস কর দেশের লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী আজ ফ্রিল্যান্সিং করেই তাদের জীবনের চলার পথ খুঁজে পেয়েছে। তুমিও পারবে যদি সঠিক দিক নির্দেশনা মানতে পারো। কাউকে অনুকরণ নয় নিজের প্রতিভায় বিকাশিত হওয়ার চেষ্টা করো, তাহলেই তুমি হতে পারবে সফল ফ্রিল্যান্সার। নতুবা ১-২ বছর বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্রতিষ্ঠান আর ফ্রিল্যান্সারদের পিছনে ঘুরে ঘুরে সময় শ্রম সব বৃথা, শুধু হতাশার মুখ দেখবে।